Welcome to my Public Health World of Bangladesh!

Welcome! If you are interested about the health and health systems of Bangladesh, its problems and prospects, you have come to the right place! Be informed...

Monday 23 April 2012

আগামী দিনের ডাক্তার

আগামী দিনের ডাক্তারদের কথা বলার আগে বলতে হয় বাংলাদেশের বর্তমানের ডাক্তারদের কথা। আজকাল খবরের কাগজের পাতা খুললেই দেখা যায় ডাক্তারদের সম্পর্কে নানা অভিযোগ; ধনী, গরিব-সমাজের সর্বস্তরের কাছ থেকে আসে এই অভি্যোগ। ডাক্তারদের ব্যবসায়ী মনোভাব, রোগীদের সাথে অসদাচরণ, কর্তব্যে অবহেলা, দুর্নীতি, অনৈতিকতা ইত্যাদি কি নেই তাতে। ‘রক্তচোষা’, ‘কসাই’, ‘অমানুষ’ ইত্যাদি নানা নামে তাদের অভিহিত করা হয়।  

কেন এই অভিযোগ? অভিযোগের গোড়ায় সমস্যাগুলি কি? সংক্ষেপে বলতে হলে প্রথমত, যে ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশে ডাক্তারি পড়ার জন্য ছাত্র বাছাই করা হয় আর যে শিক্ষাপাঠক্রম, ব্যবস্থা ও পরিবেশের মধ্য দিয়ে তাকে ডাক্তার বানান হয়, তা তাকে গ্রামীন পরিবেশে (যেখানে ৭০% এর বেশী মানুষ বাস  করে), গ্রামীন রোগব্যধি নিয়ে কাজ করার মত একজন সংবেদনশীল ও সমাজসচেতন  মানুষ হিসাবে গড়ে তোলে না। স্বল্প সম্পদের প্রেক্ষাপটে দেশীয় রোগব্যাধির চিকিসা, দেশ ও দশের দারিদ্রতার সমস্যাগুলির সাথে পরিচিত  হওয়ার জন্য মেডিক্যাল সমাজবিদ্যা এবং স্বাস্থ্যঅর্থনীতির মত মৌলিক বিষয়গুলো না জেনেই সে ডাক্তার হয়ে বেরিয়ে আসে। তার পাঠক্রমে নাই আচরণবিজ্ঞান যা তাকে রোগীর প্রতি সংবেদনশীল হতে শিক্ষা দিবে। দ্বিতীয়ত, নবীন ডাক্তারদের চাকুরীতে যেভাবে নিয়োগ দেয়া হয়, তাতে সুস্পষ্ট কোন নীতিমালার বদলে রাজনৈতিক ও অন্যান্য বিবেচনাই বেশি গুরুত্ব  পায়। গ্রামে যাওয়ার জন্য তাতে কোন প্রণোদনা থাকে না।
তৃতীয়তঃ, নিয়োগস্থলে অন্যান্য চিকিসা সহযোগী/সহকারী বা সরঞ্জামের  অভাব।ফলে আমরা দেখি, ডাক্তাররা গ্রামে যায় না, গেলেও নিয়মিত উপস্থিত থাকে না, উপস্থিত থাকলেও বেশীর ভাগ সময়ে সরকারি হাসপাতালের বদলে নিজের  চেম্বারে অর্থের বিনিময়ে রোগী দেখে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থ্যার আর একটা প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে বৈষম্য। যেখানে ও যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেই গ্রামে বা দূরবর্তীস্থানে গরীব ও প্রান্তিক জনগনের জন্য স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া এক দূরহ ব্যাপার। উপযুক্ত জনশক্তির অভাব, গ্রাম অঞ্চলে কাজ করার জন্য প্রণোদনার অভাব, সাজসরঞ্জামের অভাব ইত্যাদি নানা কারণে এটা ঘটে। এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কি করতে হবে সে সম্বন্ধে আমি এর আগে আলোচনা করেছিলাম (সমকাল ২রা অক্টোবর ২০১১)। উসুক পাঠক দেখে নিতে পারেন।  

বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোন দেশের প্রয়ো্জন অনুযায়ী ডাক্তার (সংখ্যাগত ও গুণগত উভয় দিক  থেকেই) তৈরির মূল সমস্যা হচ্ছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের মধ্যে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের অভাব। এর ফলে, বাস্তবে বিরাজমান স্বাস্থ্যসমস্যা অনুযায়ী চিকিসাশিক্ষা ব্যবস্থ্যা পরিচালিত হয় না।পাঠক্রমে নিজ দেশের বাস্তব সমস্যাগুলিকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয় না। চিকিসাশিক্ষা ব্যবস্থ্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে হাতে-কলমে শিক্ষা, কিন্তু তাও দেয়া হচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শহুরে হাসপাতালে, গ্রামের স্বাস্থ্যসমস্যাগুলির সাথে যার কোন মিল খুজে পাওয়া ভার।কিন্ত জনগনের স্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নতি করতে হলে, জনগনের স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন মেটাতে হলে, চিকিসাশিক্ষা ব্যবস্থ্যা কে বিদ্যমান স্বাস্থ্যসমস্যা অনুযায়ী ঢেলে  না সাজিয়ে উপায় নাই। অবশ্য তার মানে এই নয় যে, চিকিসাশিক্ষা ব্যবস্থ্যার কর্ষতার প্রয়োজন নাই। পেশাগত কর্ষতার সাথে সাথে নিজ দেশের তৃণমূল স্বাস্থ্যসমস্যাগুলির যথোপযুক্ত সমাধানের পথ খুঁজে বার করাই হচ্ছে আসল কাজ।
   
যাক, এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে এসব সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করা যাবে?  কিভাবে শিক্ষা ও  স্বাস্থ্যব্যবস্থ্যার মেলবন্ধন ঘটান যায়? তার জন্য কিভাবে চিকিসাশিক্ষা ব্যবস্থ্যাকে ঢেলে সাজাতে হবে? ইদানিং এসব প্রশ্নগুলিরই উত্তর খোজার চেষ্টা করছেন সারা দুনিয়ার বিশেষজ্ঞরা। এরই ধারাবাহিকতায় সারা দুনিয়ার বিশজন পেশাজীবি ও বিশেষজ্ঞ একটি স্বাধীন কমিশনের (Education of Health Professionals for the 21st Century: a global independent commission*) ছত্রছায়ায়  মিলিত হয়ে বিংশ শতাব্দীর চিকিসাশিক্ষাব্যবস্থ্যার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন। তারা দেখতে চেষ্টা করেন, কেন বর্তমান ব্যবস্থ্যা জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী স্বাস্থ্য গড়ে তুলতে পারেনি, কেন তা বাস্তব অবস্থাকে  আমলে না নিয়ে অতিমাত্রায় প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা বাড়িয়ে তুলেছে, প্রাথমিক  স্বাস্থ্যব্যবস্থ্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে হাসপাতালকেন্দ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থ্যা গড়ে তুলতে অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছে, স্বাস্থ্যব্যবস্থ্যাতে উপযুক্ত নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে ইত্যাদি। প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে তারা দুই ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলেছেনঃ প্রাতিষ্ঠানিক ও  স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যবস্থ্যা যার ফলে পরিবর্তনমুখী ও পরস্পর নির্ভরশীল একটা ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। পরিবর্তনটা ঘটবে তিন ভাবেঃ মুখস্তবিদ্যা থেকে  বিশ্লেষনমুখি, সৃজনশীল পদ্ধতিতে জ্ঞান অর্জন ও প্রয়োগ; বিশেষজ্ঞ হওয়ার পরিবর্তে বাস্তব প্রয়োজন  অনুযায়ী স্বাস্থ্যব্যবস্থ্যায় দলবদ্ধ ভাবে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন; এবং যথেষ্ট যাচাই বাছাই না করে বিশেষ কোন মডেল গ্রহণ করার পরিবর্তে সৃষ্টিশীল অভিযোজনের মাধ্যমে বিশ্বের মেধাসম্পদকে নিজেদের  প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা।পরস্পর নির্ভরশীল এই ব্যবস্থ্যায় স্বাস্থ্যশিক্ষাতেও তিনভাবে পরিবর্তনটা ঘটবেঃ একক ভাবে না হয়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থ্যার সাথে সম্পৃক্ত হয়েই শিক্ষাব্যবস্থ্যা গড়ে তোলা, স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি একক ভাবে গড়ে না উঠে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানের (network, alliances, consortium) সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গড়ে উঠা, এবং প্রতিষ্ঠানগুলি শুধু নিজেদের মধ্যে নিমজ্জিত না থেকে সারা বিশ্ব থেকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণ করে নিজেদের স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যবস্থ্যাকে সমৃদ্ধ করা । আর এভাবেই স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থ্যা একটি সাধারণ লক্ষের দিকে ধাবিত হবে। মনে রাখতে হবে, বিংশ শতাব্দির শিক্ষাব্যবস্থ্যা দিয়ে একবিংশ শতাব্দির স্বাস্থ্যব্যবস্থ্যা গড়ে তোলা যাবে না, এর জন্য চাই নতুন চিন্তা-ভাবনা, নতুন কৌশল।

*Health professionals for a new century: transforming education to strengthen health systems in an independent world. Lancet 2010;376:1923-58.

No comments: